খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার (5.7)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - জীববিজ্ঞান (নতুন সংস্করণ) খাদ্য, পুষ্টি এবং পরিপাক | - | NCTB BOOK
507
507

খাদ্য সংরক্ষণ এমন একটি প্রক্রিয়া, যেটি খাদ্যের পচন রোধ করে, যার ফলে খাদ্যের গুণাগুণ, গ্রহণযোগ্যতা এবং খাদ্যমান অটুট থাকে। খাদ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে সাধারণত পচনসৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণ এবং খাদ্যের চর্বিজাতীয় অংশের জারণ বন্ধ করা হয়।
মাছের শুঁটকিকরণ, লোনা ইলিশ, আচার, বরফ দিয়ে শীতলকরণ, চিংড়ির নাপতে, মাছের শীদল এগুলো সবই খাদ্য সংরক্ষণের বিভিন্ন প্রচলিত উপায়। আজকাল খাদ্যদ্রব্যের ক্যানিং বা কৌটাজাত করে, ধোঁয়ার মাধ্যমে স্মোকিং প্রভৃতি প্রক্রিয়া খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয়। খাদ্য সংরক্ষণে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসম্মত অনুমোদিত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যাতে খাদ্যদ্রব্যে পচন সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণ করতে না পারে। সাধারণত সোডিয়াম নাইট্রেট, সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাবার লবণ, ক্যালসিয়াম এপারনেট, সালফার ডাই-অক্সাইড, সোডিয়াম বাইসালফেট, সোডিয়াম বেনজয়েট, সরবেট (পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম) খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে অনুমোদিতভাবে ব্যবহার করা হয়। স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে ক্ষতিকারক ফরমালিন এবং বিভিন্ন রকমের রঞ্জক পদার্থ কখনই খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহার করা উচিত নয়।

খাদ্যে ভেজাল ও রঞ্জকের ব্যবহার
এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের নির্মল পরিবেশের যেমন প্রয়োজন, তেমনি নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ অপরিহার্য। বর্তমানে বাজারে অনৈতিকভাবে খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ও অস্বাস্থ্যকর রাসায়নিক দ্রব্য ভেজাল ও রঞ্জক পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করে সেগুলো বিক্রি করা হয়। এর ফলে জনস্বাস্থ্য এখন হুমকির সম্মুখীন। স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের এই ঝুঁকির ধারা চলতে থাকলে রোমানদের মতো আমরাও একদিন বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হব। একসময় রোমবাসী যে পানীয় আধার ব্যবহার করত তা সিসার তৈরি ছিল। যার ফলে পানকারী কোনো না কোনোভাবে সিসার বিষাক্ততার শিকার হয়েছে এবং বিকলাঙ্গ প্রজন্মের জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশে খাদ্যে বিভিন্ন প্রকারের ভেজাল মেশানো হয়। এর মধ্যে বাণিজ্যিক রং, এন্টিবায়োটিক, কীট ও বালাইনাশক, ফরমালিন, হেভি মেটাল উল্লেখযোগ্য। যেসব মাছ, গৃহপালিত পশু ও হাঁস-মুরগিকে অননুমোদিত দ্রব্য দিয়ে তৈরি খাদ্য খাওয়ানো হয়, সেগুলো মানবশরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ।

স্বাস্থ্যঝুঁকির কয়েকটি ক্ষতিকারক দিক
বাণিজ্যিক রং যা কাপড় কিংবা রঙের কাজে ব্যবহার করা হয়, তা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য, যেমন আইসক্রিম, গোলা আইসক্রিম, লজেন্স, বেগুনি, বড়া ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই জাতীয় খাবার ধীরে ধীরে যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট করে নানাবিধ রোগের কারণ হয়।
ফরমালিনে ডুবানো মাছ, ফল ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যে পচন সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারে না বলে কয়েক দিন বেশ টাটকা দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফরমালিন মাছের কোষের সাথে যৌগ তৈরি করে ফেলে। মাছ ধোয়া হলেও ঐ যৌগটি মাছের দেহে থেকে যায়। যা পরে রান্না করা মাছের সাথে মানবদেহে প্রবেশ করে। এই বিষাক্ত যৌগ নানা রকম জটিল রোগের উপসর্গের কারণসহ অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সারজাতীয় রোগের সৃষ্টি করে।
মজুত খাদ্যে এবং সবজিতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কীটনাশকের বিষাক্ততার সময় নষ্ট হবার আগেই দ্রব্যাদি বাজারজাত করলে বিষাক্ত খাদ্যের প্রভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। এতে শিশুরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। তাদের শরীরের বাড়ন্ত কোষে এই বিষাক্ত কীটনাশক বিরূপ প্রভাব ফেলে। ফলে একদিকে যেমন শিশুর মনের বিকাশ ব্যাহত হয়, অন্যদিকে তারা নানা রকমের অসুস্থতায় ভুগে থাকে।


খাদ্যে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য ও ভেজাল থাকে, তার একটি তালিকা দেওয়া হলো।

ভেজাল বা বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য

সম্ভাব্য উৎস

প্রতিকার
  1. এন্টিবায়োটিক
মাছ ও পশুখাদ্যে ব্যবহারের ফলে প্রাণীর শরীরে জমা হয়।শুধু অনুমোদিত ঔষধ রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ব্যবহার করতে হবে।
  1. হেভি মেটাল
মাছ ও পশুখাদ্যে ব্যবহৃত অখাদ্য উপাদান (যেমন ট্যানারির বর্জ্য) প্রাণীর শরীরে জমা হয়।অখাদ্য উপাদান যেমন ট্যানারির বর্জ্য, কয়লা, মাটি, প্রাণীর বিষ্ঠা ইত্যাদি ব্যবহার পরিহার করা।
  1. বাণিজ্যিক রং
আইসক্রিম, গোলা-আইসক্রিম, শরবত, রঙিন পানীয়, ভাজা বড়া ও বিভিন্ন মিষ্টি তৈরিতে কারখানায় ব্যবহৃত রঙের অননুমোদিত ব্যবহার।শুধু অনুমোদিত খাদ্যরং ব্যবহার করা।
  1. ফরমালিন
মর্গে লাশ সংরক্ষণের প্রধান উপাদান। মাছ, দুধ, ফল ইত্যাদি সংরক্ষণে অননুমোদিত ব্যবহার।ফরমালিন ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা।
  1. কীটনাশক
শাক-সবজি উৎপাদনে বালাইনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে বিষাক্ততা অনেক ক্ষেত্রে রয়ে যায়। শুঁটকিতে ডিডিটির অননুমোদিত ব্যবহার।কীটনাশকের বিষাক্ততা নষ্ট হবার পর শাক-সবজি বাজারজাত করা। শুঁটকিতে ডিডিটি ব্যবহার না করা।
  1. রাসায়নিক পদার্থ
কাঁচা ফল ও টমেটো পাকাতে মাত্রাতিরিক্ত কারবাইড ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের অননুমোদিত ব্যবহার। কোমল পানীয় জলে মাত্রাতিরিক্ত সরবেটের অননুমোদিত ব্যবহার।ফলকে পাকতে সময় দেওয়া, যেন প্রকৃতিগতভাবে ফল পাকে। কারবাইড ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা। পরিমিত মাত্রায় সরবেট ব্যবহার করা।
  1. জীবাণু
খাদ্য উৎপাদন কিংবা প্রস্তুতিকালে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু খাদ্যে মিশে যেতে পারে।বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ।

দলগত কাজ
কাজ: শিক্ষক শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দলে বিভক্ত করবেন এবং ভেজালযুক্ত খাবার খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো লিপিবন্ধ করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করতে বলবেন।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion